আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কালিয়াকৈরে ব্রিজের অপেক্ষায় গ্রামবাসী, লাশ বহনেও দুভোর্গ

কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি:

 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দেশ স্বাধীনের পর থেকেই একটি ব্রিজের অপেক্ষায় আছেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ। ব্রিজের অভাবে গ্রামবাসী তাদের মৃত স্বজনদের লাশ বহনেও দুভোর্গ পোহাচ্ছে যুগের পর যুগ।

 

কখনো নৌকাযোগে কখনো বাঁশের স্যাকো, কখনো হাটু পানি ভেঙ্গে নদী পাড় হয়ে কবরস্থানে নিয়ে যেতে নিহতেদের লাশ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নিমার্ণের আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি আজও। তাই মানুষের দুভোর্গ লাঘবে অতি তাড়াতাড়ি এখানে একটি ব্রিজের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

 

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এক সময় নদী পথই ছিল মানুষের একমাত্র ভরসা। সময় গড়িয়ে আধুনিক ছোয়ায় বর্তমানে মানুষের চলাচলে ভরসা হচ্ছে সড়ক পথ। সে কারণে জনগনের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন নদ-নদীর উপর ব্রিজ নিমার্ণের মাধ্যমে সড়ক সংযোগের মাধমে যোগাযোগ ব্যবস্থা করা হয়েছে আরো উন্নতি। এ উন্নয়নের ছোয়ায় খুব সহজেই এখন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলাচল করছে মানুষ। অথচ কালিয়াকৈর উপজেলার আশাপুর ও বেনুপুর এলাকার মানুষ অনেকটাই অবহেলিত।

 

স্বাধীনতার পর সড়ক যোগাযোগ মোটামুটি উন্নত হলেও ওই দুই গ্রামের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি নদীর উপর এখনো ব্রিজ নিমার্ণ হয়নি। অনেকেই বলছেন এটি ধলেশ্বরীর শাখা নদী, আবার কেউ কেউ বলছেন এটি ধানতারা নদী। যে নামেই ডাকা হোক না কেন ৪৯ বছর ধরে ওই নদীর উপর একটি ব্রিজের অপেক্ষায় আছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষাথর্ীসহ গ্রামবাসী নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

 

ব্রিজের অভাবে শুধু দুই গ্রামেই নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম ও পার্শ্ববতী ঢাকার ধামরাই থানার বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া আশাপুর ও বেনুপুর গ্রামের একমাত্র কবরস্থানটি প্রায় ১৪ বিঘা জমির উপর নিমার্ণ করা হয়েছে। বষার্ মৌসুমে কেউ মারা গেলে নৌকাযোগে এবং শুষ্ক মৌসুমে কেউ মারা গেলে কখনো বাঁশের স্যাকো, কখনো হাটু পানি ভেঙ্গে নদী পাড় হয়ে লাশ ওই কবরস্থানে নিয়ে যেতে হয়। অনেক কষ্টে নৌকা বা স্যঁাকো পাড় হয়ে জানাজার নামাজ শেষে মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পূর্ণ করা হয়।

 

অপরদিকে নদীর ওই পাড়েই দুই গ্রামের কৃষকের ধানক্ষেতসহ বেশিরভাগ ফসলি জমি রয়েছে। সেখানকার উৎপাদিত ৪শ থেকে ৫শ বিঘা জমির ফসল নিয়ে নৌকা বা স্যাঁকো যোগে ওই নদী পাড় হয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে সাধারণ কৃষকদেরও চরম দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দলের নেতারা নদীর উপর ওই স্থানে ব্রিজ নিমার্ণের আশ্বাস দিলেও আজও তা কার্যকর করা হয়নি। তাই মানুষের দুভোর্গ লাঘবে অতি তাড়াতাড়ি এখানে একটি ব্রিজের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

 

কবরস্থানের খাদেম আব্দুল করিম বলেন, বর্ষা মৌসুমে কেউ মারা গেলে নৌকা যোগে তার লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে কখনো বাঁশের স্যাকো আবার কখনো হাটু পানি ভেঙ্গে নদী পাড় হয়ে নিহতের লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে মৃত ব্যক্তির স্বজন ও জানাজায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লী চরম দুভোর্গের শিকার হন। স্থানীয় শামসুল হক, মনির হোসেনসহ আরো অনেকে বলেন, ব্রিজের অভাবে দুই গ্রামের ছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের মানুষ চরম দুভোর্গের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করছেন।

 

নদীর ওই পাড় বেশিরভাগ কৃষকের ফসলি জমি রয়েছে। সেখানকার উৎপাদিক ফসল নিয়ে অনেক কষ্টে নদী পাড় হয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ কৃষক। এতে ফসল উৎপাদন ও বাজারজাত করণ করতে কৃষকের খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে অনেক সময় কৃষক মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। যার কারণে অনেকই ফসল চাষ করতে অনিহা প্রকাশ করছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মানুষের দুভোর্গ লাঘবে এখানে একটি ব্রিজ নিমার্ণ করা হবে বলে জানিয়েছেন।

 

কালিয়াকৈর উপজেলা এলজিইডি কর্মকতার্ প্রকৌশলী সাজ্জাদ কবীর জানান, ওই স্থানে একটি ব্রিজ নিমার্নের জন্য একটি প্রকল্পে তালিকা করা হয়েছে। যেটা ১০০ মিটার কম-বেশি ব্রিজ নিমার্ণ হবে। এখন ওই ব্রিজ নিমার্ণের জন্য যাচাই-বাছাইসহ সার্ভে কাজ চলছে।

 

 

 

     এ বিভাগের আরো সংবাদ
Share via
Copy link
Powered by Social Snap